এইচএসসি শেষে বিনামূল্যে বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিভাবে সম্ভব?

বাংলাদেশের এইচএসসি শেষ করেছেন? ভাবছেন এখন কী করবেন? অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থাকে, কীভাবে সম্ভব? এই ব্লগে, বিশেষ করে ওইসব শিক্ষার্থীদের জন্য লেখা হয়েছে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার চেষ্টা করছেন—তাদের জন্য রয়েছে যথেষ্ট দিকনির্দেশনা এবং তথ্য।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকগুলো সুযোগ রয়েছে, তবে এগুলোকে বুঝতে এবং ব্যবহার করতে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। এখানে বিদেশি বিভিন্ন দেশের সরকারি স্কলারশিপের তথ্য এবং নানা প্রস্তুতির কথা আলোচনা করেছি, যা ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন।

higher education after HSC

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এবং শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলে দারুণ একটা পরীক্ষার ফলাফলের পরও অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না। দেশের বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য সংকটের মতো আসন সংখ্যা কম এবং প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অথচ, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, তাদের অনেকেই পছন্দের বিষয় পায় না। তাই প্রতি বছর প্রচুর শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দিকে ঝুঁকছে, যা অর্থনৈতিকভাবে অনেক পরিবারকে চাপে ফেলে।

কি আপনাকে বিদেশে পড়ার কথা ভাবতে বাধ্য করছে?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর খরচ দেখে ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দিকে ঝুঁকছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেমন মালয়েশিয়া, যেখানে স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বাজেটে এসে পড়াশোনা করা যায় এবং র‌্যাংকিংও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো। তাহলে কেন বেছে নিবেন না?

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুবিধা

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রধান সুবিধাগুলো স্পষ্ট—বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ, কম খরচে শিক্ষা নেওয়া, পাশাপাশি স্কলারশিপ এবং পার্ট-টাইম চাকরি করার সুযোগ। বিদেশি উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কেবলমাত্র ভালো মানের শিক্ষা নয়, চাকরি এবং সেখানকার স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগও পাচ্ছেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার আর্থিক সুবিধা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি মূল পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, সেলফ ফাইন্যান্সিং অর্থাৎ, নিজস্ব অর্থ দিয়ে পড়াশোনা। দ্বিতীয়ত, স্কলারশিপের সুযোগ গ্রহণ করে পড়াশোনা করা।

সেলফ ফাইন্যান্সে পড়াশোনা

যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা নিজেদের টাকা দিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে পারেন। তবে, এটি নির্ভর করবে আপনি কোন দেশে পড়াশোনার জন্য যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় পড়াশোনা করার জন্য বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এছাড়াও, ব্যাংক ব্যালেন্সের মধ্যে অনেক বেশি টাকা দেখাতে হবে।

ওপরের দেশগুলো ব্যয়বহুল হলেও কিছু ইউরোপীয় দেশ যেমন—ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন তুলনামূলকভাবে কম খরচে ভালো মানের গবেষণা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেয়। যাদের বাজেট পাঁচ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে, তারা এই ধরনের দেশের শিক্ষাপদ্ধতির কথা ভেবে দেখতে পারেন। আরও কিছু স্বল্প ব্যয়ের দেশ যেমন জাপান, মালয়েশিয়া, রাশিয়াও ভালো শিক্ষার সুযোগ দিয়ে থাকে এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বেশ কিছু সুযোগও রয়েছে।

স্কলারশিপে বিনামূল্যে পড়াশোনা

যারা সেলফ ফাইন্যান্স করতে পারবেন না এবং পুরোপুরি স্কলারশিপের উপর নির্ভর করছেন, তাদের জন্য রয়েছে প্রয়োজনে বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ। আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা কিছু সরকারি স্কলারশিপ রয়েছে যা আপনাকে সম্পূর্ণ খরচ বহনে সাহায্য করবে। এখানেই আপনার সেরা সুযোগ।


১০টি শীর্ষস্থানের স্কলারশিপের সুযোগ

Read more রোমানিয়া সরকারী স্কলারশীপ ২০২৪-২৫: আপনার উচ্চশিক্ষার পথে এক নতুন যাত্রা

কিভাবে নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী প্রফেসর খুজে বের করবেন

১. হাঙ্গেরির সরকারি স্কলারশিপ

হাঙ্গেরির সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডির ওপর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই স্কলারশিপের সার্কুলার প্রকাশিত হয়। এখানে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ এবং প্রতি মাসে ভালো মানের স্টাইপেন্ড (প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) পাবেন।

২. চায়না সরকারি স্কলারশিপ

প্রতি বছর চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পান। এখানে প্রতি মাসে প্রায় ৩৮ হাজার টাকার মতো স্টাইপেন্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, এয়ার টিকিট এবং শিক্ষার যাবতীয় খরচের বিষয়ে সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধা পাবেন।

৩. তুরস্ক বুরসেলারি স্কলারশিপ

এই স্কলারশিপটি মূলত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে অফার করা হয়। এখানে আইএলটিএস ছাড়াই আবেদন করা সম্ভব এবং টার্গেট করা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে। টিউশন ফি, ইনশিওরেন্স, বাসস্থান, এবং প্রতি মাসে স্টাইপেন্ড—এগুলো সবই এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

৪. জাপানের মিক্সড স্কলারশিপ

মিক্সড স্কলারশিপ জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে পরবর্তীতে নিয়মিত ছাত্র হিসাবে থাকার সুযোগও পাবেন। ৯০-৯২ হাজার টাকার মতো স্টাইপেন্ড পাওয়া যায়। প্রতি বছরে এপ্রিল/মে মাসে এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবেদন খোলা থাকে।

৫. ব্রুনাই সরকারি স্কলারশিপ

এই স্কলারশিপটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয়। প্রতি মাসে স্টাইপেন্ড দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০-৪২ হাজার। এছাড়াও বই কেনার জন্য আলাদা ফান্ডও দেওয়া হয়।

৬. রোমানিয়া সরকারি স্কলারশিপ

রোমানিয়া, সেনজেনভুক্ত একটি দেশ, এবং প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে এর জন্য আবেদন নেওয়া হয়। এখানে আবেদন করতে কোনো আইএলটিএস প্রয়োজন নেই। একাধিক বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে এবং এখানে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে যেতে পারবেন।

৭. রাশিয়ার সরকারি স্কলারশিপ

রাশিয়ার যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লেখাপড়ার মান, তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। প্রতিবছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডির স্কলারশিপ অফার করা হয়। নভেম্বর বা জানুয়ারিতে সাধারণত এটির সার্কুলার আসে।

৮. ADB স্কলারশিপ

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) এর অধীনে নটি দেশে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সার্কুলারটি সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়।

৯. ICCR স্কলারশিপ (ভারতীয় শিক্ষা)

এই স্কলারশিপটি মূলত বাংলাদেশিদের জন্য। এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। যে কেউ অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডি স্তরে পড়াশোনা করতে পারবেন, তবে মেডিকেল বিষয়ের উপর সুযোগ নেই।

১০. মিশর এবং মরক্কো সরকারি স্কলারশিপ

মিশর এবং মরক্কো এই দুইটি দেশ প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি স্কলারশিপের সুযোগ দেয়। এগুলোও ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ এবং প্রচুর সুবিধাসহ ছাত্রদের জন্য পড়ার সুযোগ করে দেয়।

স্কলারশিপের জন্য কিছু ভুল ধারণা

অনেকে ভাবে, স্কলারশিপ পেতে খুব জটিল বিচার প্রক্রিয়া থাকে, যা সবসময় সত্য নয়। আপনি যদি মানসম্পন্ন প্রস্তুতি নেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা দেন, তাহলে সুযোগ পেতে কোনও বাধা থাকবেনা। এছাড়া, IELTS অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক নয়, তবে থাকলে ভালো।

উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তৈরি এবং প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমেই পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলুন। এছাড়া আপনার এসএসসি এবং এইচএসসি’র নম্বরপত্র, সার্টিফিকেট, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে নিন।

IELTS-এর প্রয়োজন না হলেও এটি থাকলে আপনি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। পাশাপাশি একটি ভালো সিভি এবং অন্তর্ভুক্ত করার মতো কিছু এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস যোগ করা হলে অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়াতে আপনি আগেই এগিয়ে থাকবেন।

উপসংহার

বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যত গঠন করার এই সুযোগগুলো হাতছাড়া করা উচিত নয়। মূল বিষয় হলো সঠিক প্রস্তুতি ও সময়মতো পদক্ষেপ। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আবেদন করলে নিশ্চয় আপনি সফল হবেন। আশা করি আজকের তথ্যগুলো আপনাদের সাহায্য করবে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার চেষ্টা করুন, এবং একটি সফল ভবিষ্যৎ গড়তে অংশ নিন।

Leave a Comment